হাতের লেখা ভালো করার উপায় জেনে নিন।


একজন মেধাবী ব্যাক্তিত্বের পরিচয় তার সুন্দর হাতের লেখা।শুধু তা-ই নয়, সুন্দর হাতের লেখা আপনার ব্যক্তিত্বকে এক ভিন্ন মাত্রা দান করে।

কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটারের যুগে এসে সুন্দর হাতের  লেখা  নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই আমাদের।



হাতের লেখা কেন সুন্দর করা প্রয়োজন?

ছোটবেলায় আদর্শ লিপিতে আমরা পড়েছিলাম- ‘হস্তাক্ষর সুন্দর হইলে পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাওয়া যায়’।


পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে সুন্দর হাতের লেখার কোন বিকল্প নেও,যদিও হাতের লেখার উপর অতিরিক্ত কোন মার্কস নেই তবু্ও একজন শিক্ষক লেখা দেখেই বুঝতে পারে আপনি কেমন স্টুডেন্ট আর নাম্বাটাও সেভাবেই দেয়।


একটা কথা অপ্রিয় হলেও সত্য যে,আমাদের দেশে অনেক শিক্ষক আছে যারা খাতায় কি লিখলো সেটি না দেখে কেমন লিখলো, কতটুকু লিখলো সেটি দেখে মূল্যায়ন করে।

তাই ভালো ফলাফল করতে এবং বন্ধমহলে বাহ্বা পেতে হাতের লেখার কোন বিকল্প নেই।




কিভাবে হাতের লেখা ভালো করা যায়?

 বাংলা বা ইংরেজী যে কোন হাতের লেখা সুন্দর করতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিৎ।

 হাতের লেখা সুন্দর ও প্রশংসা যোগ্য ও আকর্ষণীয়  করে গড়ে তুলতে  নিচের নিয়মগুলো মেনে চলুনঃ

১.সঠিক উপাদান নির্ধারণ করা : 

লেখা শুরু করার আগে সেই জিনিসগুলো নির্বাচন করুন যেগুলো ব্যবহার করে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। অনেকেই মনে করে থাকেন সুন্দর হাতের লেখার জন্য ‘ফাউন্টেন পেন’ অত্যাবশকীয়।


হাতের লেখা ভালো করার উপায় জেনে নিন।

 আসলে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এমন একটি কলম বা পেন্সিল বেছে নিন যা আপনার আঙুলের সঙ্গে সহজে মানিয়ে যাবে এবং লেখার সময় কাগজের ওপর যাকে জোরে চাপ দিতে হবে না। আর কাগজ হিসেবে ‘নোটবুক’ জাতীয় লাইন টানা কাগজ ব্যবহার করা যেতে পারে। 

২.কলম ধরা : 


হাতের লেখা ভালো করার উপায় জেনে নিন।

কলম বা পেন্সিল নিব এর কাছাকাছি ধরে লিখুন, তবে শক্তভাবে ধরে নয়। যদি নিবের কাছাকাছি ধরে লিখতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, তাহলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ কলম বা পেন্সিল ধরার আসলে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণই আপনার হাতের গড়নের ওপর নির্ভর করে।

অক্ষর বা বর্ণ গুলো সঠিক ভাবে লেখাঃ

 ভালো হাতের লেখার প্রথম শর্ত হল অক্ষর বা বর্ণ স্পষ্ট ও পরিষ্কার এবং সঠিক মাত্রা বা মার্জিনে লেখা।

 বাংলা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ সঠিক ভাবে লক্ষ্য করতে হবে। যে সকল বর্ণে মার্জিন বা মাত্রা আছে সে গুলো মার্জিন বা মাত্রা সহ এবং অর্ধ মাত্রা বর্ণ গুলো এবং মাত্রাহীন বর্ণ গুলো মাত্রাহীন ভাবেই লেখার চেষ্টা করতে হবে। 

বাক্য লিখার সময় যেন একটি বর্ণ বা অক্ষর পাশের বর্ণ বা অক্ষরের সাথে মিশে বা পাশের বর্ণের মাঝে ঢুকে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

অন্য দিকে একটি শব্দের পর অন্য শব্দ লেখার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন দূরত্ব ঠিক থাকে। দূরত্ব কম হলে লেখা পড়তে অসুবিধা হবে বা বোঝা যাবে না আবার দূরত্ব বেশি হলে পড়তে অসুবিধা সহ ভালো দেখাবে না। সাধারন্ত দুটি শব্দের মাঝে এক বর্ণ বা অক্ষর পরিমান ফাকা যায়গা রেখে পরের শব্দ লেখা উচিৎ। হাতের লেখা সুন্দর , ভালো আর আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে এগুলি প্রথম শর্ত। 

৪. বর্ণ বা অক্ষরের প্রতিটি রেখা সমন্তরাল রাখতে চেষ্টা করাঃ

হাতের লেখা সুন্দর করতে একটি বর্ণের রেখা গুলোর সাথে অন্য বর্ণের একই তলে থাকা অন্য বর্ণ গুলোর রেখা গুলো সমান্তরাল রাখতে চেষ্টা করতে হবে। হাতের লেখা আকর্ষণীয় করতে বর্ণের অক্ষর গুলো সমান্তরাল রাখা অতি আবশ্যক। নিচের ছবিতে থাকা উদাহরণ গুলো লক্ষ্য করুন 


৫. বর্ণ বা অক্ষরের সাইজ বা আকার আকৃতি ঠিক রাখাঃ

বর্ণ বা অক্ষরের আকার আকৃতি সুন্দর হাতের লেখা গড়ে তোলার অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। 

একটি বর্ণ বড় অন্যটি ছোট এমন হলে দেখতে বিশ্রী লাগে। এই সমস্যা সমাধানের একটি উপায় রয়েছে। স্কেল বা রুলার দিয়ে মার্জিন টেনে দুটি মার্জিনের মাঝে লিখতে হবে। বার বার লিখতে হবে এবং ধীরে ধীরে লিখতে হবে।

 এভাবে কিছুদিন অভ্যাস করলে নিশ্চয় বর্ণ ছোট বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যা দূর হবে। তবে হ্যা , অনেক সময় আকার ( া ) , রশ্বিকার ( ি ) ইত্যাদি অনেকে ইচ্ছা করেই অক্ষরের থেকে বড় বা ছোট করে লেখে , সেটা কিন্তু কোন সমস্যা নয় বরং সুন্দর বা স্টাইলিশ করার জন্য এমন করা সৌন্দর্যময় বটে। 


৬.পয়েন্ট করে লিখুনঃ

হাতের লেখা ভালো করার উপায় জেনে নিন।


পয়েন্ট ব্যবহার করে লিখুন। এতে করে আপনার লেখাটা যেমন গঠনমূলক হয়, তেমনই আপনার যুক্তিগুলো সুনির্দিষ্টভাবে ফুটে উঠে।

৭. অনুচ্ছেদ করুনঃ

হাতের লেখা ভালো করার উপায় জেনে নিন।


অর্থাৎ, ইংরেজিতে যেটাকে বলে ‘প্যারা’ করে লেখা। কিছু কিছু বিষয়, যেমন, বাংলা ১ম ও ২য় পত্রতে পয়েন্ট করে লেখা যায় না। সেই ক্ষেত্রে আপনি এক একটি অনুচ্ছেদ আকারে আপনার মতামতগুলো উপস্থাপন করতে পারেন।

৮.  উদাহরণ দিনঃ

আপনার লেখার মূল্য ততই ভারী হবে আপনি যতই তাতে উদাহরণ দিতে পারবেন। আপনি যে বিষয়টি ‘বুঝে’ লিখেছেন তা আপনার দেওয়া উদাহরণেই ফুটে উঠে।  

৯.লেখার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়াঃ। 


হাতের লেখা ভালো করার উপায় জেনে নিন।

লেখার পরেই পড়ার অবস্থান। হাতের লেখা সুন্দর করতে বেশি বেশি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যত বেশি লেখা হবে তত বেশি ভুল সংশোধন হবে। যত বেশি ভুল সংশোধন হবে ততো বেশি লেখা সুন্দর হবে। চেষ্টা থাকতে হবে আর লেখার প্রতি গুরুত্ব সহকারে সময় দিতে হবে। আশা করা যায় খুব দ্রুত হাতের লেখা সুন্দর হয়ে উঠবে। 

১০.অনুশীলন, অনুশীলন এবং অনুশীলনঃ

 হাতের লেখা ভালো করার জন্য অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে আপনি যত বেশি অনুশীলন করবেন ততই দক্ষতা বাড়বে।

হাতের লেখা ভালো করার উপায় জেনে নিন।


পরীক্ষার খাতায় লেখা নিয়ে সতর্কতা ও টিপসঃ

• লেখা অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে।

 • প্রতিটি লাইন সোজা ও সমান্তরাল হতে হবে এবং এক লাইন থেকে অপর লাইনের ন্যূনতম গ্যাপ ০ . ৫ সেমি থাকতে হবে।

 • ভুল হলে একটানে মাঝ বরাবর কেটে দিতে হবে। কোনভাবে ঘষামাজা করা যাবে না। 

• পরীক্ষায় পয়েন্ট ও প্যারা করে লিখলে বেশি মার্কস পাওয়া যায়।



উপরের নিয়ম গুলো অনুসরণ করলে আশাকরি হাতের লেখা ধীরে ধীরে সুন্দর , আকর্ষণীয় ও স্টাইলিশ হয়ে উঠবে। তাহলে আজি শুরু করুন , নিজেকে স্মার্ট আর ব্যক্তিত্ত সম্পন্ন পরিচয় করাতে সুন্দর বা ভালো হাতের লেখার কোন বিকল্প নেই।

 


Post a Comment

Previous Post Next Post